Friday, September 29, 2023
HomeDivision of BangladeshDhakaআমাগো জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

আমাগো জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

আমাগো জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি | ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেক মানুষ। এমনিতেই বাজারে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় সংসারের খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ঘোষণা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। তবে আজ শনিবার সকালে পৌর এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখছেন। এতে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, পরিবেশকদের (ডিলার) কাছ থেকেই বেশি দামে গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। এ জন্য খুচরা বাজারেও দাম বেশি।

আজ সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের বেউথা এলাকায় কোহিনুর ইসলামের দোকানে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে আসেন চর বেউথা গ্রামের লোকমান হোসেন (৫০)। তিনি ১২ লিটারের সিলিন্ডার গ্যাস কেনেন ১ হাজার ৫৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘আমাগো মতোন গরিব মাইনষের যে কী বিপদ! বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এহন সিলিন্ডার গ্যাসের দামও বাড়ানো অইচে। দুঃখের কথা কে শুনব?মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম বান্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী কাপড়ের দোকান পরিচালনা করেন। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’ হয়ে উঠেছে তাঁর জন্য। ইদ্রিস আলী বলেন, ‘গত এক বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দেড়-দুই গুণ বেড়েছে। কয়েক দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। আমাগো মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপন এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।’

পৌর এলাকার সেওতা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ‘চাল, ডাল, আটা, তেল—প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচও বেড়েছে। তার ওপর একলাফে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম এত বাড়ায় আমাদের দিশাহারা অবস্থা।’সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম চাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার চিত্রও দেখা যাচ্ছে। তবে পুরো বিষয়টি পরিবেশকদের দামের ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

সদর উপজেলার দীঘি মাঝিপাড়া এলাকার খুচরা বিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, সর্বশেষ দাম বৃদ্ধির পর থেকে তিনি পরিবেশকদের কাছ থেকে ১২ লিটারের প্রতিটি সিলিন্ডার ১ হাজার ৫৫০ টাকায় কিনছেন। এরপর সিলিন্ডারপ্রতি ৫০ টাকা লাভে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর সিলিন্ডার বাড়িতে পৌঁছে দিলে ১ হাজার ৬৫০ টাকা নিচ্ছেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেউথা এলাকায় এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের পরিবেশক আরিফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ১২ লিটারের সিলিন্ডারপ্রতি ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। আমরা তো সেই দামেই বিক্রি করছি। তবে খুচরা বিক্রেতারা ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতারাও তো কিছুটা লাভ করবেন।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার বলেন, আগে অনেক মানুষ লাকড়ির চুলায় রান্নার কাজ করতেন। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামের মানুষও রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে এলপিজি গ্যাসের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাবেন। নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রি নিশ্চিত করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। অতিরিক্ত দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রির অভিযোগে বৃহস্পতিবার এক খুচরা ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তারা যেন সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে পারেন, সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে মানিকগঞ্জে তিতাস গ্যাসের গ্রাহক আছেন ১২ হাজারের বেশি। প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকার বেশি গ্যাসের বিল দিলেও গ্রাহকেরা গ্যাস পাচ্ছেন খুব সামান্য। এই গ্যাস–সংকটের কারণে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন গ্রাহকেরা। নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকার গৃহবধূ আতিফা আক্তার বলেন, ‘লাইনে গ্যাস না পেলেও প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা বিল দিচ্ছি। তার ওপর বাড়তি টাকা দিয়ে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এমনিতেই বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। উপায় না থাকায় গ্যাসের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’তিতাস গ্যাসের মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মিটারবিহীন ১২ হাজার ১০২ জন আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকদের লাইনে ১ হাজার ১৭০টি এক (সিঙ্গেল) চুলা ও ২২ হাজার ৯৬০টি দুটি (ডাবল) চুলা রয়েছে। প্রতি মাসে একটি চুলার জন্য একজন গ্রাহককে ৯৯০ টাকা এবং দুটি চুলার জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে।

Spread the love
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments