Friday, September 29, 2023
HomeDivision of BangladeshChittagongবাবা কারাগারে মায়ের লাশ মর্গে দুই সন্তানের কী হবে

বাবা কারাগারে মায়ের লাশ মর্গে দুই সন্তানের কী হবে

বাবা কারাগারে মায়ের লাশ মর্গে দুই সন্তানের কী হবে | মা পম্পী মালাকার মারা গেছেন। বাবা লিটন মালাকার কারাগারে। মা–বাবা কাছে না থাকায় মন মরা হয়ে বসে আছে তাঁদের দুই সন্তান দিয়া ও অপূর্ব মালাকার। আজ বৃহস্পতিবার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পশ্চিম সাহাব্দীনগর গ্রামে দিয়ার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। খেলছে বাড়ির উঠানে। অপেক্ষায় আছে মা কখন আসবে। পাশে ১০ বছর বয়সী ভাই অপূর্ব দাদীর সঙ্গে উঠানে মনমরা হয়ে বসে আছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই ছোট মেয়েটি আগেই বলে উঠল দিয়া মালাকার ওর নাম। এ সময় অপূর্ব মালাকার বলে উঠল  মা আর আসবে না, বাবাও বাড়িতে নেই।অপূর্ব মালাকারের এই অসহায়ত্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল এই প্রতিনিধির। ওই দুই শিশুর বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে গতকাল বুধবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন তাদের মা পম্পী মালাকার (২৯)। আর আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় কারাগারে তাদের বাবা লিটন মালাকার (৪৭)।রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সাহাব্দীনগর গ্রামের কেরানি বাড়ির প্রয়াত রাজেন্দ্র মালাকারের ছেলে লিটন। তাঁকে আজ দুপুরের দিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে লিটনের স্ত্রী পম্পীর লাশ ভোরে থানায় নিয়ে আসা হয়।

ময়নাতদন্তের জন্য লাশ আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম সাহাব্দীনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় লিটনের মা পটোরানী মালাকারের সঙ্গে। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাল (বুধবার) রাতে ঘুমানোর আগে রাত ৯টার দিকে লিটন ও তাঁর স্ত্রী পম্পীর মধ্যে সামান্য কথা–কাটাকাটি হয়। পম্পীর মা বকুল রানীর সঙ্গে ফোনে আমার কথা হচ্ছিল তখন। ঝগড়ার বিষয়টি বকুল রানীকে জানালে তিনি মেয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সকালে কথা বলবে বলে শয়নকক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পম্পী। আমার ছেলে লিটন ঘরের বারান্দায় সোফায় ঘুমিয়ে পড়ে। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোররাত চারটার দিকে দুই সন্তান ফ্যানের সঙ্গে মায়ের ঝুলন্ত নিথর দেহ দেখে ঘরের সবাইকে ডাকাডাকি করে। পরে ঘরের দরজা ভেঙে শয়নকক্ষে ঢোকে। কিন্তু ততক্ষণে পম্পী আর বেঁচে ছিল না।’

পম্পীর বাবার বাড়ি রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়াদাম এলাকায়। সকালের দিকে রাঙ্গুনিয়া থানায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় এসে পম্পীর মা বকুল রানী চৌধুরী আহাজারি করছেন। মুর্ছা যাচ্ছেন বারবার। পম্পীর বাবা মন্টু চৌধুরীও শোকাহত।ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ১১ বছর আগে লিটনের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তান আছে। কাতারপ্রবাসী জামাতা লিটন বিদেশ থাকাবস্থায় আমার মেয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে পাকা একতলা ঘর তৈরি করে। ১০ মাস আগে কাতার থেকে দেশে ফিরে আসে লিটন। আসার পর থেকে পাওনাদাররা টাকা ফেরত পেতে চাপ সৃষ্টি করে। আমার মেয়ে লিটনকে টাকা পরিশোধের জন্য বললে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এছাড়া সংসারের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমার মেয়েকে প্রায় সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। আমার মেয়ে স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে পাঁচ মাস আগে আমাদের বাড়িতে চলে আসে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যের অনুরোধে আমি আমার মেয়েকে লিটনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিই।’পম্পীর বাবা মন্টু চৌধুরী আরও বলেন, গতকাল বুধবার রাতে আমার স্ত্রী বকুলকে লিটনের মা পটোরানী মালাকার ফোন করে বলেন স্বামী-স্ত্রী দুইজনে খুব ঝগড়া করছে। আমি ঝগড়া মেটাতে পারছিনা।

তখন আমার স্ত্রী বলে, “আমার মেয়ে পম্পীকে ফোনটা দেন।’’ কিন্তু স্বামী আর শাশুড়ি কেউ আমার মেয়েকে ফোনে কথা বলতে দেয়নি। পরে ফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত চারটার দিকে জামাতা আমার মেয়ে  শীলাকে ফোন করে বলে তোমার বোন ঘরের শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ের কাছে খবর পেয়ে আমার পরিবারের লোকজন নিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে পারুয়া মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাই। পম্পীর বাবা মন্টু চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘লিটন আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। আমার মেয়ে দুঃখে–ক্ষোভে স্বামীর প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেছে। আমি এই ঘটনায় লিটনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা করেছি। এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহবুব মিল্কী বলেন আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলায় সকালে লিটন মালাকারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

Spread the love
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments