Friday, September 29, 2023
Homeআন্তর্জাতিকযুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথা চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথা চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথা চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা প্রায় এক বছর আগে বেইজিংয়ে এমন এক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল, যার দিকে তীক্ষ্ণ নজর ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের। তখন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জমকালোভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

বেইজিংয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সি। তিনি পুতিনের সম্মানে নৈশভোজ দিয়েছিলেন। তখন এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে একটি ‘সীমাহীন’ অংশীদারত্বের ঘোষণা এসেছিল।

বেইজিংয়ে সি-পুতিনের মধ্যকার এই বৈঠকের কয়েক সপ্তাহ পরই রুশ ট্যাংক সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে। ইউক্রেনে শুরু হয় রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা। এই হামলার বিষয়ে চীন ‘নীরব’ ভূমিকা পালন করে।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে নিজেদের অবস্থান ‘নিরপেক্ষ’ বলে দাবি করে বেইজিং। তারা আরও দাবি করে, রাশিয়া যে ইউক্রেন হামলা চালাবে, সে সম্পর্কে আগাম তথ্য বেইজিংয়ের কাছে ছিল না।

তবে ক্রেমলিনের সুরেই এই হামলায় উসকানির জন্য ন্যাটোকে দোষারোপ করে বেইজিং। চীনের এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে আরও ফাটল ধরায়।

গত এক বছরে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। বেইজিং-মস্কোর মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে চলার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়।

শূন্য করোনা নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চীন এখন অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। বৈদেশিক বিষয়ে বেইজিংয়ের সুর এখন তুলনামূলকভাবে নরম। তারা পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বেইজিং তার হারানো জায়গা ফিরে পেতে চাইছে। চাইছে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা।

ইউক্রেনে গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলার জেরে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় অভূতপূর্ব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই এক বছরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীন তার ‘সীমাহীন’ অংশীদারত্ব থেকে সরে আসেনি। বরং তারা সম্পর্ক জোরদার অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে বদলে দিতে চায় বেইজিং। এই লক্ষ্যে চীন তৎপর রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বেইজিংয়ের এই তৎপরতারই অংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন পুতিনকে যেকোনো বস্তুগত সাহায্য-সহযোগিতার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে চীনকে সতর্ক করেছিলেন।

মার্কিন গোয়েন্দারা বলছেন, রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে চীন সহায়তা করেছে—এমন কোনো প্রমাণ তারা এখন পর্যন্ত পাননি। তবে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি রাশিয়ার কাছে প্রাণঘাতী নয়—এমন সরঞ্জাম বিক্রি করেছে বলে সম্প্রতি বেইজিংয়ের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই অভিযোগ বেইজিং দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করায় কিছু চীনা কোম্পানিকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে জোর দিয়ে বলছে, তারা চলমান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে চায়। গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেন সংকট নিয়ে রাশিয়ার কাছে উদ্বেগ জানায় চীন। তা সত্ত্বেও চীন তার উত্তরের প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে।

দুই দেশের নেতাদের মধ্যে গত বছরের শেষে একটি প্রথাগত আলোচনা হয়। সে সময় বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য পুতিনকে অভিনন্দন জানান সি। আলোচনায় সি দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সমন্বয় বাড়ানোসহ বৈশ্বিক অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

গত ডিসেম্বরে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দুই নেতার মধ্যে এই আলোচনা হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সেটি নিয়ে সি ও পুতিনের মধ্যে অন্তত চারবার আলোচনা হয়। তার মধ্যে একবার হয় সশরীর বৈঠক।

অন্যদিকে, চীনা প্রেসিডেন্ট সি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ইউক্রেনীয় নেতা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।

চীন ও রাশিয়ার মধ্যে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়ান মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ টোকিওতে বৈঠক করেন। তাঁরা চীনের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চীন-রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারাও উদ্বিগ্ন। এ প্রসঙ্গে হংকং ব্যাপ্টিস্ট ইউনিভার্সিটির গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক জ্যঁ-পিয়েরে ক্যাবেস্তান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কের মূলে রয়েছে বেইজিংয়ের বাহ্যিক স্বার্থ। এ সম্পর্কের নিশানা হলো যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোটব্যবস্থা।

চীনের মূল উদ্দেশ্য হলো, এসব জোটব্যবস্থাকে দুর্বল করা। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বেইজিং সফরে যাওয়ার কথা ছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা ‘গোয়েন্দা বেলুন’ অনুপ্রবেশের ঘটনায় তিনি এ সফর স্থগিত করেন। বেলুনকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

Spread the love
amaderdinkal.com
amaderdinkal.comhttps://amaderdinkal.com
ডেস্ক রিপোর্ট
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments