সাত কলেজ বড় তিন সমস্যায় | ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়েছে। তবে কলেজগুলোতে তুলনামূলক শিক্ষার্থী বেশি। শিক্ষক না বাড়ালে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া কঠিন। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও মনোযোগী হতে হবে। এ বিষয়ে তাঁরা প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন।রাজধানীর সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক ক্লাস শেষে হন্তদন্ত হয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। পরে কার্যালয়ে গিয়ে তিনিসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শিক্ষকস্বল্পতার কারণে তাঁদের প্রায় প্রতিদিনই চাপে থাকতে হয়।
৮ মে এই বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, বিভাগে শিক্ষক আছেন চারজন। উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে ক্লাস পরীক্ষা সবই তাঁদের সামলাতে হয়। তাঁদের বাইরে একজন অতিথি শিক্ষক আছেন।পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের এই কলেজ ছয় বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়। লক্ষ্য ছিল মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু তা অর্জনে অনেকটাই পিছিয়ে কলেজটি। কারণ হিসেবে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষকেরা বলছেন শিক্ষকের পর্যাপ্ত সংখ্যা ও মানের ওপর গুণগত শিক্ষা অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে এখন শিক্ষক আছেন ৩৩ জন। এই বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে প্রতিবছর ভর্তির সুযোগ পান ১৫০ জন।অন্যদিকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে প্রতিবছর ভর্তি হন ১৭০ জন। এর পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতেও প্রতিবছর ভর্তি হন কয়েক শ শিক্ষার্থী।
শিক্ষকসংকট শুধু সোহরাওয়ার্দী কলেজেই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মোট সাতটি কলেজের অবস্থা কমবেশি একই। বাকি কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল।এই সাত কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির পর সম্প্রতি পরীক্ষা ও ফল প্রকাশের সময় এবং পাঠ্যসূচি আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হলেও বড় তিনটি মৌলিক সমস্যা রয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষকসংকট, গবেষণাগার ও অবকাঠামোগত সমস্যা এবং প্রথম বর্ষের পর থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি কমে যাওয়া।
সাত কলেজের শিক্ষকদের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একাডেমিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আছে সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই তিনের সমন্বয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে সংকট সমাধান করতে হবে।আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার, সাবেক অধ্যক্ষ ঢাকা কলেজ।সাত বড় কলেজে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার বিষয়টিও সমস্যা হিসেবে দেখছেন শিক্ষকেরা। আছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি। তাঁরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর এসব কলেজের শিক্ষকদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেওয়া হতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন এখন সাতটি কলেজে সময়মতো পরীক্ষা হচ্ছে। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বেড়েছে। তবে কলেজগুলোতে তুলনামূলক শিক্ষার্থী বেশি। শিক্ষক না বাড়ালে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া কঠিন। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও মনোযোগী হতে হবে। এ বিষয়ে তাঁরা প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন।